নরেন্দ্র মোদী-Narendra Modi বিরোধী আমেরিকার ধনকুবের জর্জ সোরোস অথবা উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন— কার সঙ্গে নৈশাহারকে অগ্রাধিকার দেবেন তিনি? সম্প্রতি এই প্রশ্নে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কৌশলী-জবাব ছিল, তাঁর নবরাত্রির উপবাস চলছে! সব ঠিক থাকলে কোনও ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী ন’বছর পরে পাকিস্তানে যাবেন। জয়শঙ্কর আগামিকাল ইসলামাবাদে পৌঁছবেন এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে।
নবরাত্রিও শেষ! পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ আয়োজিত নৈশভোজ এড়ানোর কোনও সুযোগ নেই জয়শঙ্করের। এসসিও-র সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নৈশভোজে করমর্দন, সৌজন্য বিনিময় করতে হবে তাঁকে। যা নিঃসন্দেহে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সংঘাতপূর্ণ আবহাওয়ায় সাউথ ব্লকের জন্য অস্বস্তির। শরিফ ছাড়াও ওই নৈশভোজে থাকবেন পাক বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার-ও। কূটনৈতিক মহল হালকা চালে বলছে, ওই ভোজ কতটা হজম হবে বিদেশমন্ত্রীর, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে! জানা গিয়েছে, ক্যালেন্ডারের হিসেবে দু’দিনের সফর হলেও, আসলে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় পাকিস্তানে থাকবেন জয়শঙ্কর।
কূটনৈতিক মহলের মতে, বিদেশমন্ত্রীকে পাকিস্তানে পাঠানো Narendra Modi মোদী সরকারের তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি একটি বক্তৃতায় জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, যে কোনও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মতোই, ভারত অবশ্যই চায় পাকিস্তানের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক। কিন্তু তা আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস থেকে চোখ ফিরিয়ে নয় বা কারও ইচ্ছাকে তোষামোদ করতে নয়। নয়াদিল্লির বক্তব্য, এসসিও-র প্রতি ভারতের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে তাকে সবচেয়ে বেশি তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে এই সিদ্ধান্তে। জয়শঙ্করকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে সাউথ ব্লক এই বার্তাটাই দিতে চাইছে, দ্বিপাক্ষিক সংঘাতের ঊর্ধ্বে উঠে তারা বহুপাক্ষিক আলোচনা এবং কূটনীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
পাশাপাশি, অস্থির ও অগ্নিগর্ভ প্রতিবেশী বলয়ে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীর পাকিস্তান সফর একটি সার্বিক ইতিবাচক বার্তা বহন করবে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। জয়শঙ্করের কথায়, “ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি না। এসসিও-র এক জন একনিষ্ঠ সদস্য হিসেবেই যাচ্ছি।” ভারত আগেই জানিয়েছিল, জয়শঙ্করের এই সফরের সঙ্গে ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কোনও সম্পর্ক নেই। রবিবার পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দার বলেছেন, ‘‘ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের থেকে কোনও পার্শ্ববৈঠকের অনুরোধ পাইনি।
আমরাও এই মর্মে কোনও আবেদন করিনি। তবে প্রোটোকল অনুযায়ী সব দেশের নেতাদের মতোই ভারতের বিদেশমন্ত্রীকেও স্বাগত জানানো হবে।’’ এরই মধ্যে পাকিস্তানের এক মন্ত্রী আহসান ইকবালের অভিযোগ, ভারত ইমরান খানের দল পিটিআই-এর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে ইসলামাবাদে এসসিও বানচালের চেষ্টা করছে। তবে এই বিবৃতির কোনও গুরুত্ব শাহবাজ় সরকার দেয়নি। আপাতত শহরটিকে কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে পিটিআই-এর প্রতিবাদ আন্দোলনের পাশাপাশি, পাকিস্তানে বিভিন্ন ছোটবড় জঙ্গি সন্ত্রাস চলছে।
ইসলামাবাদ এবং সংলগ্ন রাওয়ালপিন্ডিতে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচটি জেলায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। ২০১৫ সালে ভারতের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আফগানিস্তান নিয়ে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে ইসলামাবাদে গিয়েছিলেন। তার পরের বছর সার্ক-ভুক্ত রাষ্ট্রগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হয়েছিল পাকিস্তানে, যোগ দিতে গিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সেটাই ছিল শেষ বার পাকিস্তানের মাটিতে কোনও বহুপাক্ষিক সম্মেলনে ভারতের যোগদান।