Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
পাঞ্জাবের Punjab এক সামান্য ছাত্র নেতা থেকে কী ভাবে গ্যাংস্টার হয়ে উঠলেন লরেন্স বিষ্ণোই lawrence bishnoi। মুম্বাইয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বাবা সিদ্দিককে। রাজনীতিক হিসেবে তাঁর বেশ নামডাক ছিল। মহারাষ্ট্র রাজ্যের বিধায়ক ও সাবেক মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। গতকাল শনিবার রাতে এই হত্যাকাণ্ডের পর সন্দেহের তির যাচ্ছে lawrence bishnoi লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দিকে। কারাগারে থাকা lawrence bishnoi লরেন্স বিষ্ণোই একটি কুখ্যাত গ্যাংয়ের মূল হোতা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই গ্যাং হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
বাবা সিদ্দিক হত্যার পর দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে মুম্বাই পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা নিজেদের লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছেন। পুলিশও বলছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন এই গ্যাংয়ের সদস্যরা। ধারণা করা হয়, বিষ্ণোই গ্যাংয়ে অস্ত্র চালাতে দক্ষ এমন ৭০০ সদস্য রয়েছেন। তাই গতকালের ঘটনার পর গ্যাংটি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
lawrence bishnoi লরেন্স বিষ্ণোইয়ের বয়স বেশি নয়। ১৯৯৩ সালে পাঞ্জাবে জন্ম তাঁর। ২০১০ সাল পর্যন্ত তাঁর জীবন কেটেছে রাজ্যের আবোহার শহরে। পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে জন্ম লরেন্স বিষ্ণোইর। বাবা ছিলেন হরিয়ানা পুলিশের কনস্টেবল। কিন্তু পুলিশের চাকরি ছেড়ে চাষবাস শুরু করেন তিনি। আবোহার জেলায় ছেলেবেলা কেটেছে লরেন্সের। তারপর চণ্ডীগড়ের ডিএভি কলেজে ভর্তি হন । কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরাও পড়ে যান । কিন্তু শাস্তি এড়াতে বহুতল থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান। হিন্দি সিনেমার কায়দায় লরেন্সের এই পালানোর ঘটনা লোকের মুখে মুখে ঘুরতে শুরু করে। ছাত্রদের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন ‘হিরো’।
সেই ইমেজ কাজে লাগিয়েই পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সপু পার্টির হয়ে ভোটে লড়েন লরেন্স বিষ্ণোই। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তাঁর। ২০১১ সালে যোগ দেন পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস স্টুডেন্টস কাউন্সিলে। গাড়ি দুর্ঘটনার পরে তার ভিতরেই বান্ধবীর অগ্নিদগ্ধ হয়ে রহস্য মৃত্যুর ঘটনা জীবনের মোড় বদলে দেয় লরেন্স-এর। বিরোধী ছাত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে তুমুল ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। চণ্ডীগড়ে চলে ব্যাপক গোলাগুলি। মামলা দায়ের হয় লরেন্সের নামে। সেখানে তাঁর পরিচয় হয় ‘গ্যাংস্টার’ গোল্ডি ব্রারের সঙ্গে। এরপর ধীরে ধীরে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এরপরেই সহযোগীদের নিয়ে ‘০০৭’ নামে একটি দল গঠন করে ফেলেন তিনি । প্রবল ইচ্ছে ছিল রাজনীতিবিদ হওয়ায়, কিন্তু ছাত্রাবস্থা থেকেই হাত পাকিয়ে ফেলেন খুন-জখম-রাহাজানিতে। চণ্ডীগড়ে তোলাবাজি- শুরু করে তাঁর গ্যাং।
বিষ্ণোইয়ের বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। রয়েছে হত্যা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ। যদিও এসব অভিযোগের কোনোটাই স্বীকার করেননি তিনি। আগেই বলা হয়েছে, ভারতজুড়ে তাঁর গ্যাংয়ে ৭০০ বন্দুকধারী রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। নিজের গ্যাংয়ের এই সদস্যদের মাধ্যমে কারাগারে বসেও বাইরের অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। যার মধ্যে ১০০ জন শার্প শুটার। সুপারি কিলার হিসেবে এই শার্প শুটারদের অন্য গ্যাংকে ভাড়া দিতেন তিনি। এ ভাবে পাঞ্জাবের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের কার্যকলাপ।
২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে চণ্ডিগড়ে অপরাধ কর্মকাণ্ড শুরু করেন বিষ্ণোই। ২০১৩ সাল নাগাদ তিনি ত্রাস সৃষ্টিকারী এক চরিত্রে পরিণত হন। কয়েকটি হত্যার ঘটনার সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে পড়ে। পরে তাঁর গ্যাং মদ বেচকেনা ও অস্ত্র চোরাচালানে অর্থ লগ্নি করা শুরু করেন। হত্যাকারীসহ ভয়ংকর সব অপরাধীদেরও আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়ে আসছেন তাঁরা।
২০১৪ সালে রাজস্থান পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয় লরেন্স বিষ্ণোইয়ের। এরপর তিনি কারাবন্দী হন। সেখান থেকেই আরও সংঘবদ্ধভাবে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। কারাগারে থাকাকালে জস্বিন্দর সিং ওরফে রকি নামের আরেক অপরাধীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তাঁর। ২০১৬ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন রকি। বন্দী অবস্থায়ও লরেন্স বিষ্ণোইয়ের প্রভাব–প্রতিপত্তি বেড়েই চলেছিল। রাজস্থানের ভারতপুর জেলায় যে কারাগারে তিনি বন্দী ছিলেন, সেখানকার কর্মকর্তাদের হাত করে নানা কার্যসিদ্ধি করতেন। ২০২১ সালে তাঁকে সেখান থেকে দিল্লির তিহার কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়। কলেজের বন্ধু গোল্ডি বরারের সঙ্গেও তিহাড় থেকেই যোগাযোগ করেছিল লরেন্স। ততদিনে পাঞ্জাবের ছেলেটি স্থানীয় একজনকে খুন করে কানাডায় গা ঢাকা দিয়েছে গোল্ডি। তিহাড় থেকে বন্ধুকে নির্দেশ পাঠিয়ে যাবতীয় কাজ করাতেন তিনি।
এরই মধ্যে Jodhpur যোধপুরে সলমন খান Salman Khan কালো হরিণ শিকারে অভিযুক্ত হন। বিষ্ণোই সম্প্রদায় কালো হরিণকে ভগবান বলে মনে করে। নিজের সম্প্রদায়কে নিজের পক্ষে টানতে ২০১৮ সালে যোধপুরেই সলমনকে হত্যা করার কথা ঘোষণা করে বসেন লরেন্স। সেই থেকে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন তিনি। ২০২০ সালে সম্পত নেহরা নামে এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হন বেঙ্গালুরুতে। লরেন্স বিষ্ণোই তাঁকে সলমন খানকে হত্যার সুপারি দিয়েছে বলে পুলিশের কাছে কবুল করেন তিনি। ফলে নতুন করে সলমান খানকে খুনের চেষ্টার মামলা শুরু হয় লরেন্সের বিরুদ্ধে।
২০২২ সালের মে মাসে Punjab পাঞ্জাবে গায়ক সিধু মুসেওয়ালা খুন হন।কানাডা থেকে গোল্ডি বরার ঘোষণা করেন, লরেন্সের নির্দেশে পাঞ্জাবি খুন করেছে লরেন্স গ্যাং। তারও আগে ২০২১ সালে বিষ্ণোই ঘনিষ্ঠ আকালি দলের নেতাকে বিট্টুকে খুনের অভিযোগ ওঠে সিধু মুসেওয়ালার ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয় লরেন্সের মনে। এ দিকে যুব সম্প্রদায়কে নিজের দলে টানার জন্যও নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সে ক্ষেত্রে সিধু মুসেওয়ালার জনপ্রিয়তা বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর কাছে। এ সব চলার মধ্যেই বিষ্ণোই গ্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী দেবেন্দর বাম্ভিয়াকে নিয়ে সিধু মুসেওয়ালার গান কোটি কোটি পাঞ্জাবির মধ্যে সাড়া ফেলে দেয় । যা মেনে নিতে পারেননি লরেন্স। মুসেওয়ালাকে পথ থেকে সরানোর প্ল্যান করে নেন লরেন্স। চলতি বছরের এপ্রিল মাসেও সলমান খানের বাসভবন ‘গ্যালাক্সি’ লক্ষ্য করে গুলি চালান লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্যরা। একাধিকবার সুপারস্টারকে হুমকিও দেওয়া হয়।
তিহাড়ের আট নম্বর জেলের বাসিন্দা lawrence bishnoi লরেন্স বিষ্ণোই প্রভাব খাটিয়ে এবং আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে একাধিকবার জেল থেকেই সাংবাদিকদের ভিডিও কলে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে লাইভ টেলিকাস্টও করা হয়। মুম্বই আন্ডারওয়ার্ল্ড প্রায় ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় দাউদ ইব্রাহিম হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন লরেন্স। দাউদ দেশ ছাড়ার পর যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে, সেই সলতনতে বসে নিজেকে অপরাধ জগতের কিং প্রতিষ্ঠা করতে সর্ব শক্তি প্রয়োগ করেন তিনি।
প্রয়োজনে দাউদকে খতম করে দিতেও পিছু হটবেন না বলে ঘোষণা করেন লরেন্স। আর তাই রাজনৈতিক নেতাদের বিশেষ করে যাঁরা সলমন ঘনিষ্ঠ তাঁদের টার্গেট করা শুরু করেন। যুব সম্প্রদায়কে নিজের পক্ষে রাখা এবং দেশব্যাপী আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে বার্তা পাঠানো লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের মূল টার্গেট। রোমহর্ষক ব্লু প্রিন্ট ছকে একের পর এক হত্যাকাণ্ডে নিজের ছাপ ফেলতে মরিয়া তিনি। কারণ, দাউদের ছেড়ে যাওয়া চেয়ারটাই জীবনের স্বপ্ন পাঞ্জাবী গ্যাংস্টারের।
আরও পড়ুন জেলার খবর কলকাতা ভারত বিশ্ব সংবাদ খেলার খবর বিনোদনের খবর ব্যবসা বাণিজ্য খবর স্বাস্থ্য সংবাদ