পর্তুগিজ কলোনির মোড়ের পরিচিত সেই ছোট্ট ক্যাফেতে প্রতিদিনের মতোই সকালে খবরের কাগজ নিয়ে বসেছিলেন জোসেফ। হাতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ। কিন্তু খেলাধুলার পাতায় আল–নাসরের সংবাদ দেখতেই তার মুখটা নিস্তেজ হয়ে যায়। পাতায় ছাপা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর (Ronaldo)ছবি যেন তার বুকের ভিতরে চাপা কষ্টটাকে আরও উসকে দেয়। মাসখানেক আগেই পর্তুগিজ মহাতারকার গোয়ায় আসার কথা ছিল, অথচ তিনি এলেন না। পাশে বসা বন্ধু জর্জও জোসেফের হতাশায় সঙ্গ দিলেন। জোসেফ বললেন, “গোয়ার রক্তে পর্তুগিজ ঐতিহ্য মিশে আছে। রোনাল্ডোকে একবার সামনে থেকে দেখলে জীবনটা পূর্ণ হয়ে যেত।” বলতে বলতে গলায় যেন ভারী আবেগ জমে উঠল।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!২২ অক্টোবর ফাতোরদা নেহরু স্টেডিয়ামে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টু–র ম্যাচ—এফসি গোয়া বনাম আল নাসর। রোনাল্ডোর সম্ভাব্য ভারত সফরের প্রত্যাশায় ম্যাচটিকে ঘিরে গোটা গোয়ায় ছিল বিরাট উত্তেজনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুরোধের বন্যা, টিকিটের বিপুল চাহিদা, আর সবার মনে এই বিশ্বাস—পর্তুগালের সঙ্গে আত্মিক যোগ থাকা রোনাল্ডো নিশ্চয়ই আসবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি এলেন না। হাজারো সমর্থকের স্বপ্ন এক মুহূর্তে ভেঙে গেল। শোনা যায়, রোনাল্ডো বিদেশ সফর বেছে বেছে করেন এবং সেই কারণেই নাকি তিনি গোয়ায় যাননি। আল নাসরের কোচ জেসুসের ব্যাখা ছিল, তাঁকে শুধুই বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল।
৩২ বছরের জর্জ যেন এখনও আক্ষেপে ভরা—“কী পরিকল্পনাই না করেছিলাম! গোটা শহর ভরে যেত। আমরা বন্ধুরা ব্যানার বানিয়েছিলাম, প্রবেশদ্বারে ‘GOAT’ লিখে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সবটাই ব্যর্থ হলো।” তবুও জোসেফ–জর্জরা পুরোপুরি হতাশ থেকে যাননি। রোনাল্ডো না এলেও তারা সামনে থেকে দেখতে পেরেছেন সাদিও মানে, হোয়াও ফেলিক্সসহ আরও কয়েকজন তারকা खिलाड़ियोंকে।
ম্যাচে ২–১ ব্যবধানে জয় পেয়েছিল আল নাসর। মানে, ফেলিক্স, আব্দুলরহমান ঘারিব—সবার খেলাতেই দারুণ ছন্দ ছিল। গোয়ার মানুষ রোনাল্ডোর উপস্থিতি না পেলেও তাদের পারফরম্যান্স দেখে খানিকটা আনন্দ পেয়েছেন, যদিও স্থানীয় দলের হার সেই খুশিতে দাগ ফেলেছে।
চা শেষ করে কাগজ ভাঁজ করতে করতে জোসেফ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন—“রোনাল্ডো না এলেও ফুটবলের প্রেম তো হারাইনি। তবু সেই স্বপ্নের ছোঁয়া মিস থেকেই গেল।” মাস পার হলেও গোয়ার পর্তুগিজ বংশোদ্ভূত বাসিন্দাদের সেই আক্ষেপ আজও টাটকা।
