হুগলিতেও এবার দেখা মিলতে চলেছে কালীঘাটের আদলে নতুন দেবালয়ের। শুনে অবাক লাগলেও বাস্তবে রূপ নিতে আর বেশি দেরি নেই। হরিপালের শ্রীপতিপুর পশ্চিম গ্রামে সবুজ কালীর মন্দির এখন নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে, যা দেখতে হবে কলকাতার কালীঘাট মন্দিরের এক ছোট সংস্করণের মতো। সাত দশকেরও বেশি পুরনো এই পূজার ৭৫তম বর্ষ উপলক্ষে চলছে জোরকদমে নির্মাণকাজ। রটন্তি কালীপুজোর তিথিতেই মন্দিরের উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তাঁদের আশা, এবার শুধু সবুজ কালী দর্শন নয়, ‘মিনি কালীঘাট’-এর আকর্ষণে আরও বেশি মানুষের সমাগম ঘটবে এখানে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!কিন্তু এই সবুজ কালী (Green Kali) এত বিখ্যাত হল কীভাবে? ইতিহাসের একটু পুরনো পৃষ্ঠা উল্টালে পাওয়া যায় উত্তর। শ্রীপতিপুর পশ্চিম গ্রামের এক দরিদ্র, কিন্তু ধর্মপ্রাণ বৈষ্ণব পরিবারে জন্মেছিলেন বটকৃষ্ণ অধিকারী। ছোট থেকেই বৈষ্ণব রীতিনীতি তাঁর জীবনের অংশ। পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন ভিনরাজ্যে কাজ করলেও পরে ভাগ্যের টানে গ্রামে ফিরে এসে চাষাবাদে মন দেন। সংসারী জীবন তাঁর পছন্দ না হলেও, পরিবারগত কারণে আঙুরবালা দেবীর সঙ্গে বিবাহ হয় তাঁর। কিন্তু হঠাৎই তাঁর জীবন অন্যদিকে মোড় নেয়। মাঠে গরুর খুঁট বাঁধতে গিয়ে এক সন্ন্যাসীর কাছ থেকে দীক্ষার পূর্বাভাস পান তিনি। এরপরের ঘটনাপ্রবাহ রহস্যে ঢাকা। জনশ্রুতি বলছে, শ্মশানে সাধনা করতে করতে তিনি সিদ্ধি অর্জন করেন এবং মা কালী ও শ্রীকৃষ্ণের দর্শন লাভ করেন।
বৈষ্ণব পরিবারে কালীপুজো ছিল প্রায় নিষিদ্ধ। কিন্তু নানা বাধা অতিক্রম করে বটকৃষ্ণ তাঁর বাড়িতে প্রথমে ঘট স্থাপন করেন। পরে স্বপ্নাদেশে প্রতিষ্ঠা করেন এক অনন্য মূর্তি—যেখানে দেবী কালো বা নীল নন, বরং সবুজাভ বর্ণে কৃষ্ণ-শক্তির সম্মিলিত রূপ। রটন্তি কালীপুজোর দিনেই এর প্রতিষ্ঠা হয়। পুরাণ মতে, রাধিকা যখন শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে লীলা করছিলেন, তখন আয়ান ঘোষ এসে তাঁকে কালীপুজোরত অবস্থায় দেখেন। রাধিকাকে অপমানের হাত থেকে রক্ষা করতে কৃষ্ণ নিজেই কালীমূর্তি ধারণ করেন। এই কাহিনি ‘রটন্তি’ নামের উৎস বলে মনে করা হয়।
বর্তমানে বটকৃষ্ণের পুত্র, পণ্ডিত শিবানন্দপুরী এই পঞ্চমুণ্ডি মন্দিরে সাধনা করেন। সারা বছরই ভক্তদের ভিড় লেগে থাকে সবুজ কালীর দর্শনে। এবছর ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তৈরি হওয়া নতুন কালীঘাট-আদলের মন্দিরকে কেন্দ্র করে এখন অধিকারী বাড়িতে উৎসবের প্রস্তুতি তুঙ্গে।
