উত্তরপ্রদেশের Uttar Pradesh বহরাইচে দুর্গা ভাসানের শোভাযাত্রায় গোষ্ঠী সংঘর্ষে যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল থেকে এলাকার পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। উত্তেজিত জনতা একটি বেসরকারি হাসপাতাল সহ বেশ কিছু বাড়িঘর, দুচাকার গাড়ি, দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। মৃত ২২ বছরের যুবক রামগোপাল মিশ্রর দেহ নিয়ে পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখাতে তহসিল অফিসে জড়ো হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। অবস্থা পর্যালোচনা ও এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ পুলিশ-প্রশাসনের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।
দুর্গা প্রতিমা ভাসানের সময় ডিজে বাজিয়ে নাচগান নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত। জায়গাটি মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ায় ঝগড়া-বিবাদ মারামারিতে পৌঁছয়। শুরু হয় ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি, যথেচ্ছ গুলিও চলতে থাকে। তখনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান রামগোপাল। বহরাইচের পুলিশ সুপার বৃন্দা শুক্লা জানান, ২৫-৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এলাকায়। অনাসৃষ্টিকারী সকলকে চিহ্নিত করা গিয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সলমন নামে একজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তার বাড়ির ভিতর থেকেই গুলি চলেছিল। সেখানেই তার দোকান ছিল। এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতিকরাও চুপ করে বসে নেই। রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি অজয় রাই বলেন, গোটা রাজ্যে জঙ্গলরাজ চলছে। বহরাইচে গুলিবৃষ্টি হল, পুলিশ লাঠিচার্জ করল বারাণসীতে। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করে নিজের মঠে চলে যাওয়া উচিত। এদিন সকাল হতে না হতেই শয়ে শয়ে মানুষ রামগোপালের দেহ নিয়ে তহসিলের দিকে যাত্রা করেন।
তাঁদের হাতে ছিল লোহা-বাঁশের লাঠি সহ অন্যান্য অস্ত্র। জেলাশাসক থেকে পুলিশ সুপার সকলেই সেখানে হাজির ছিলেন। মারমুখী জনতা পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। দেহের অন্ত্যেষ্টি করতে অস্বীকার করেন পরিবারের লোকজন। বহরাইচ-সীতাপুর হাইওয়েতে দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বেশ কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে ৬ কোম্পানি উত্তরপ্রদেশ সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বহরাইচে। গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে ইন্টারনেট পরিষেবা স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রবিবার রাতে দুর্গাপুজোর বিসর্জন নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে গুলিতে প্রাণ হারায় ২২ বছরের যুবক রামগোপাল মিশ্রর। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহরাইচের মহারাজগঞ্জ বাজারে দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রা চলার সময় দুই গোষ্ঠীতে সংঘর্ষ বাধে। দুপক্ষের মারামারিতে জনা ছয়েকের বেশি জখম হন। বেশ কিছুক্ষণ ধরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ইট-পাথর ছোড়া ও গুলির লড়াই চলতে থাকে।
Uttar Pradesh উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। যারা দোষী তারা পার পাবে না বলেও বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দেন। পুলিশ জানিয়েছে, মনসুর গ্রামের মহারাজগঞ্জ বাজারের উপর দিয়ে দুর্গা প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা করে একদল যুবক ভাসানে যাচ্ছিল। মনসুর গ্রামের বাসিন্দা রামগোপাল মিশ্র সংঘর্ষের সময় শোভাযাত্রাকারীদের মধ্যে গুলিতে প্রাণ হারান। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।
যুবকের মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছতেই উত্তেজনা চরম আকার নেয়। ফকরপুর সহ আশপাশের এলাকায় দুর্গা ভাসানের শোভাযাত্রা বয়কট করেন বাসিন্দারা। মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন পথ আটকে দুর্গা প্রতিমা রাখা যাবে না। ভাসান চলবে। ধর্মীয় সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা করে নির্বিঘ্নে ভাসান করার নির্দেশ দেন যোগী। তিনি পুলিশকে বলেন, সমস্ত নদীর ঘাটে এবং জলাশয়ে কর্মীর সংখ্যা বাড়াতে। শোভাযাত্রার সময় এই ঘটনার কারণে দুই থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে সাসপেন্ড করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।