বাঙালিকে সাধারণত মাছ-ভাতপ্রিয় হিসেবে ভাবা হয়। বহু মানুষের ধারণা, আমিষ ছাড়া দিনের খাবারের কথা বাঙালিরা কল্পনাও করতে পারেন না। কিন্তু সেই প্রচলিত ধারণাকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বাঙালিদের প্রাণের শহর কলকাতা এবার অর্জন করল দেশের সেরা ভিগান-সহায়ক শহরের (Vegan) খেতাব। পশু-অধিকার সংগঠন PETA India নভেম্বরের বিশ্ব ভিগান মাস উপলক্ষে কলকাতাকে এই বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেছে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!সংস্থার বক্তব্য, বহুদিন ধরেই কলকাতায় নিরামিষ বা ভিগান খাবারের বিস্তৃত বৈচিত্র্য সহজেই পাওয়া যায়। শহরের খাদ্যসংস্কৃতিতে এমন অনেক পদ রয়েছে, যা স্বাভাবিকভাবেই প্রাণিজ উপাদানবিহীন, অথচ সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। আলু পোস্ত, ঘুগনি, ফুচকা কিংবা খিচুড়ির মতো প্রাচীন নিরামিষ পদ বাঙালি রন্ধনশৈলীর অঙ্গ। পাশাপাশি ধোঁকার ডালনা, মোচার ঘণ্ট, ছোলার ডালের মতো কিছু শ্রমসাধ্য নিরামিষ রান্নাও দীর্ঘদিন ধরে বাঙালির রান্নাঘরে জায়গা করে নিয়েছে।
স্ট্রিটফুডের ক্ষেত্রেও কলকাতা দীর্ঘদিন ধরে ভিগান সংস্কৃতিকে লালন করেছে। রাস্তার ধারের সস্তা দোকান হোক বা পাড়ার ঠেলাগাড়ি—ঘুগনি, চপ, মুড়ি-চানাচুর, এমনকি ফুচকার মতো অসংখ্য পদ সম্পূর্ণ ভিগান হওয়া সত্ত্বেও সকলের কাছে সমান জনপ্রিয়। PETA Indiaর মতে, সাম্প্রতিক সময়ে শহরের রেস্তরাঁয় ভিগান খাবারের উপস্থিতি আরও বেড়ে উঠেছে। বড় বড় খাবারের ঠেক থেকে শুরু করে সাধারণ খাওয়ার জায়গা—যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, ভিগানরা বিনা অসুবিধায় পছন্দমতো খাবার খুঁজে পাচ্ছেন।
এই সম্মান ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছেন কলকাতার মেয়র ও রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। দেশের বিভিন্ন নিরামিষাশী অধ্যুষিত শহরকে পিছনে ফেলে কলকাতার এই স্বীকৃতি পাওয়া নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।
খাদ্যবিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, বাঙালির খাদ্যাভ্যাসকে শুধু মাছ-ভাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেখা ভুল ধারণা। বাংলার রান্নায় যে বহুমুখী আমিষ পদ রয়েছে, তার পাশাপাশি নিরামিষ বা ভিগান রান্নার সমান সমৃদ্ধ ধারাও যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে। তাই কলকাতার ভিগান-বান্ধব চেহারা নতুন নয়; বরং এটি বাঙালির দীর্ঘদিনের খাদ্যঐতিহ্যের একটি স্বাভাবিক বিস্তার।
PETA Indiaর কর্তা কিরণ আহুজা জানান, কলকাতা বহুদিন ধরেই ভিগান খাবারে একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করে এসেছে। সেই ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতেই এবার সেরা ভিগান-সহায়ক শহরের শিরোপা কলকাতার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
