দেবীপক্ষের আগমনেও অন্ত নেই অপরাধের। মা দুর্গার আরাধনায় মাতে উঠতে চলেছে রাজ্যবাসী। এরই মাঝে জয়নগরের (Jaynagar) মহিষমারিতে ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় ফের নতুন করে বিক্ষোভের সঞ্চার করেছে সাধারণ জনগণের মধ্যে। শুক্রবার রাতে মহিষমারি এলাকায় একটি জলাভূমি থেকে উদ্ধার হয়েছে ওই শিশুর দেহ।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!স্থানীয়দের অভিযোগ, শিশুটিকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনার পরেই ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে যায় জয়নগরের মহিষমারিতে। জনরোষের মুখে পরে স্থানীয় পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সোচ্চার হয় এলাকাবাসী। থানা ঘেরাও করে ভাঙচুর করা হয়। মহিষমারির পুলিশ ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকে।
সামাল দিতে নামানো হয় র্যাফ। বিক্ষোভ রুখতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের কথা স্বীকার করেছে অভিযুক্ত যুবক। তবে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেনি ধৃত। জনরোষে জ্বলছে জয়নগর।
নিহত শিশুর পরিবারে অভিযোগ, শুক্রবার দুপুরে পড়তে গিয়েছিল চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রী। কিন্তু বাড়ি না ফেরায় দুশ্চিন্তায় মহিষমারির পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ জানাতে যায় তাঁরা। কিন্তু পুলিশ তাঁদের অভিযোগে গুরুত্ব না দিয়ে উলটে জয়নগর থানায় অভিযোগ জানাতে বলে। এদিকে বাড়ি থেকে মাত্র এক কিলোমিটারের মধ্যেই একটি জলাশয় থেকে উদ্ধার হয়েছে শিশুর দেহ। আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বছর ১৯-এর অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার সকাল থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন এলাকার মানুষ। প্রথমে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। তার পর থানায় ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়। মহিষমারির পুলিশ ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। ডাকা হয় দমকল। পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাফ নামানো হয়েছিল। লাঠিচার্জও করেছে পুলিশ। ছোড়া হয়েছে কাঁদানে গ্যাস। পুলিশ সূত্রে খবর, স্থানীয়দের বিক্ষোভে ১২ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন।
যেখান থেকে শিশুর দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, সেই এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। এসপি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে আছে। আমাদের পুলিশের পুরো টিম এখানে আছে।’’পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ প্রসঙ্গে এসপি বলেন, ‘‘এখানে মহিষমারি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। আমরা রাত ৯টা নাগাদ খবর পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু করি। কোথা থেকে শিশুটি নিখোঁজ হয়েছিল, কে শেষ বার তাকে দেখেছিল, এই তথ্যগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল তখনই।
সাধারণত কোনও শিশু নিখোঁজ হলে অপহরণের মামলা রুজু করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। রাতে অভিযুক্তকে চিহ্নিতও করা হয়। জয়নগর থানায় সাড়ে ১২টা নাগাদ মামলা রুজু হয়েছে। তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। অপরাধের কথা তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। পুলিশ প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ করেছে। তার পরেও এলাকায় ক্ষোভ কেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
পুলিশের কেউ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন এসপি। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, পুলিশ ক্যাম্পে আগুন ধরানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে পদক্ষেপ করা হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করবে পুলিশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে জয়নগরে পৌঁছেছেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার, প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি আকাশ মাঘারিয়া-সহ একাধিক পুলিশকর্তা। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলেও এলাকায় চাপা উত্তেজনা রয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার কুলতলি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে কুলতলি থানা ঘেরাও অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে।